আড়াইহাজার প্রতিনিধি : নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অপবাদ দিয়ে দুই যুবককে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।। শুক্রবার দিনভর উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ব্রাহ্মন্দী সাড় পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ওই এলাকার স্বপন মিয়া ও তার চাচাতো ভাই মাসুম মিয়াকে স্বজনরা শনিবার ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ব্রাহ্মন্দী গ্রামের মোনতাজ উদ্দিনের ছেলে স্বপন যানবাহনের বডি মিস্ত্রির কাজ করেন। তার চাচাতো ভাই তাহের আলীর ছেলে মাসুম টিউবওয়েল বসানোর কাজ করে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শেষে প্রতিদিনের মত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তারা। শুক্রবার ভোরে কিছু বুঝে উঠার আগেই ইউপি সদস্য জাইদুল হকের নেতৃত্বে স্থানীয় আহাম্মদ আলীর ছেলে সিরাজ, নজরুল, সেলিম, শহীদুল্লাহ ও আলমগীর তাদের শোবার ঘর থেকে ডেকে এনে রাস্তার পাশের মেহগনি গাছে সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। তাদেরকে নিষিদ্ধ অটো রিক্সার ব্যাটারী চুরি অভিযোগে রড দিয়ে হাত পায়ের তালু থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে থাকে। খবর পেয়ে তাদের স্বজনরা ছুটে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বের করে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে স্বজনরা সন্তানদের বাঁচানোর জন্য থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হন। থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রফিদউল্লাহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও পুলিশের সামনেই জাইদুলের লোকজন তাদেরকে নির্যাতন করতে থাকে। ইউপি সদস্য জাইদুল হক স্থানীয় ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে পুলিশকে চলে যেতে বলেন। পুলিশও ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। শুক্রবার দুপুরে মেহগনি গাছ থেকে আমগাছে নিয়ে শেকল দিয়ে বেঁধে পুনরায় পিটাতে থাকে। নির্যাতনের শিকার মাসুম ও স্বপন কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নির্যাতিতরা মারা যেতে পারে ভেবে ওই দিন রাতে ইউপি সদস্য জাইদুল হক তাদেরকে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ স্বপন ও মাসুমের আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে তাদেরকে থানা থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরে স্বজনরা তাদের চিকিৎসাার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাব্বি ইসমাইল ভূইয়া বলেন, স্বপন ও মাসুমের শরীরের বিভিন্ন অংশে অমানবিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
স্বপনের মা আলেয়া বেগম বলেন, স্বপন ও মাসুমকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে তাদের ধরে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে পিটানো হয়েছে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষরা তাদের ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন।
পুলিশের সামনে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রফিদউল্লাহ বলেন, স্বপন ও মাসুম চুরি করেছে এমন কোন প্রমান পুলিশ পায়নি। থানায় তাদের ব্যাপারে আগে কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। ।
স্বপন ও মাসুমকে গাছে বেঁধে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য জাইদুল হক বলেন, আমার সামনে কেইউ তাদের পেটাতে আসেনি। স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়নি।
আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক বলেন, কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তাকে পুলিশে সোপর্দ না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন গুরুত্বে সাথে দেখছে। তবে পুলিশের কোন অফিসারের এ ব্যপারে কোন গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার হবে। ###